বাংলাদেশের সবচেয়ে ছোট জেলার নাম মেহেরপুর। এই মেহেরপুর জেলার আয়তনসম পৃথিবীর একটি দেশ আছে। দেশটির নাম সিঙ্গাপুর। সিঙ্গাপুর হলো দুনিয়ার এক বিস্ময়কর দেশ। ধনে, জ্ঞানে, বৈচিত্র্যতায় এতো ক্ষুদ্র একটা দেশ, এতো সমৃদ্ধ হতে পারে সিঙ্গাপুরকে না দেখলে বিশ্বাস করা যায় না। এ এক বিরল দেশ! সম্প্রতি এই দেশটি এশিয়ার সবচেয়ে ইনোভেটিভ (উদ্ভাবন ক্ষমতা সম্পন্ন) দেশ হিসেবে নাম করেছে। যে দেশের জনসংখ্যা মাত্র আধা-কোটি, সে দেশটি কী করে উদ্ভাবনে দুনিয়াখ্যাত হয় ভাবতেই বিস্মিত হই!
সিঙ্গাপুরের নাম্বার ওয়ান ইউনিভার্সিটির নাম এনইউএস ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি অব সিঙ্গাপুর। এই এক ইউনিভার্সিটি সিঙ্গাপুরকে বহুদূর নিয়ে গেছে। এই প্রতিষ্ঠানটি হলো এখন এশিয়ার স্ট্যানফোর্ড! ওয়ার্ল্ড র্যাঙ্কে প্রথম কুড়িটির একটি। এই প্রতিষ্ঠানটি বয়সে আমাদের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চেয়ে পনের বছর বড়ো। কিন্তু গবেষণা, উদ্ভাবন আর শিক্ষার মানে পনেরশ ক্রোশ এগিয়ে গেছে।
সিঙ্গাপুর তাদের জিডিপির ২.২% খরচ করে গবেষণায়। সে হিসেবে প্রায় দশ বিলিয়ন ইউএস ডলার। অর্থাৎ আমাদের জাতীয় বাজেটের প্রায় এক-পঞ্চমাংশ তারা শুধু গবেষণাতেই ব্যায় করে। তাদের দেশে প্রায় চল্লিশ হাজার গবেষক। অর্থাৎ আধা-কোটি মানুষের দেশে আধা-লাখ গবেষক! ভাবা যায়! এই দেশটির লক্ষ্য, দুনিয়ার বুকে উদ্ভাবনে অনন্য হওয়া। ষাটের দশকে স্বাধীন হওয়া সিঙ্গাপুরের এই বিস্ময়কর এগিয়ে যাওয়ার জাদুরকাঠির নাম হলো “এডুকেশন এন্ড রির্সাচ”। কোন হালকার উপর ঝাপসা মারা গবেষণা নয়। মানুষকে ভাওতাবাজি দেয়া গবেষণা নয়। হালের সর্বাধুনিক গবেষণায় দিন-রাত খাটছে ওদের গবেষকরা।
সিঙ্গাপুর তার তরুণ ছেলে-মেয়েদের পাঠিয়ে দিয়েছে জাপান, জার্মানি, যুক্তরাষ্ট্র এইসব দেশগুলোতে। সে তরুণদের বয়স বাইশ-চব্বিশ বছর। তাদের কেউ হয়তো ন্যানোসাইন্স পড়ে, কেউ এরোস্পেস কিংবা কেউ আর্টিফিসিয়াল ইন্টিলিজেন্স নিয়ে গবেষণা করে। এই তরুণদের জন্য দেশে যেমন শিক্ষা ও গবেষণার পরিবেশ তৈরি করা হয়েছে, তেমনি সারা দুনিয়ার সেরা সেরা প্রতিষ্ঠানে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থাও করা হয়েছে। এইসব তরুণদেরকে আবার সরকার অনেক টাকার প্রকল্প দিয়ে দেশে নিয়ে যাচ্ছে। সরকার দিবে টাকা, তরুণরা দিবে মেধা। থাকবে সবোর্চ্চ জবাবদিহিতা। এই ধারাবাহিকতায়, সে দেশ এখন “ইনোভেশন হাব” হয়ে উঠেছে।
পৃথিবীর অন্যতম ছোট একটি দেশ সরা দুনিয়াকে তাক লাগানোর জন্য উদ্ভাবনের পেছনে ছুটছে। যে পরিমাণ অর্থ তারা ব্যায় করছে, সেটা বহু ধনী দেশও করার সাহস করছে না। কিন্তু সিঙ্গাপুর জানে, উদ্ভাবনে সেরা হওয়ার মানেই হলো দুনিয়ার সেরা হওয়া। তাই ওদের দেশটা ছোট হলেও, স্বপ্নটা অনেক বড়ো। সেই স্বপ্নের পথে বহুদূর এগিয়েছে সিঙ্গাপুর!
রউফুল আলম,নিউ জার্সি, যুক্তরাষ্ট্র।