একজন সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে ওয়ালস্ট্রিটের উচ্চ আয়ের চাকরিটি ছেড়ে দিয়ে জেফ বেজস যখন অনলাইন বইয়ের দোকান অ্যামাজন ডটকম শুরু করেন, তখন হয়তোবা তাঁকে অনেকেই বোকাই ভেবেছিলেন; কিন্তু সেই অ্যামাজনের কল্যাণেই তিনি আজ বিশ্বের শীর্ষ ধনী। যুক্তরাষ্ট্রের শিয়াটলে একটি গাড়ির গ্যারেজে ১৯৯৪ সালে অ্যামাজন প্রতিষ্ঠা করেন জেফ বেজস। সেটি এখন রাজস্বের দিক থেকে বিশ্বের সবচেয়ে বড় খুচরা কম্পানি। ব্যবসা বিস্তৃত হয়েছে অডিও, ভিডিও, সফটওয়্যার, ইলেকট্রনিকস থেকে বিচিত্র সব পণ্যে। বাজার ছড়িয়েছে পুরো বিশ্বে।
সহায়ক প্রতিষ্ঠান অ্যালেক্সা দিয়ে ক্লাউড কমপিউটিং সেবা ও কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা নিয়ে কাজ চলছে। সর্বশেষ হিসাব অনুযায়ী অ্যামাজনের বর্তমান বাজার মূল্য ৭৫০ বিলিয়ন ডলার (প্রতি ডলার ৮৪ টাকা হিসেবে যা দাঁড়ায় ৬৩ লাখ কোটি টাকা)। গত বছর কম্পানিটির শেয়ারের দর বেড়েছে প্রায় ৬০ শতাংশ। আর সেই সুবাদেই কম্পানির চেয়ারম্যান, প্রেসিডেন্ট এবং সিইও জেফ বেজস ২০১৮ সালে বিশ্বের শীর্ষ ধনীতে পরিণত হয়েছেন। ফোর্বস ম্যাগাজিনের হিসাবে এক বছরে তাঁর সম্পদ রেকর্ড ৩৯ বিলিয়ন বেড়ে ২০১৮ সালে হয়েছে ১১২ বিলিয়ন ডলার (প্রতি ডলার ৮৪ টাকা হিসাবে যা দাঁড়ায় ৯ লাখ ৪০ হাজার ৮০০ কোটি টাকা)। বেজস প্রতিষ্ঠা করেছেন মহাকাশ বিষয়ক কম্পানি অ্যারোস্পেস। কিনেছেন ওয়াশিংটন পোস্ট পত্রিকা। আরো বেশ কিছু ব্যবসা-বাণিজ্যে তাঁর অংশীদারিত্ব রয়েছে, মানবহিতৈষী কর্মকাণ্ডেও তিনি জড়িত।
যুক্তরাষ্ট্রের লস অ্যাঞ্জেলেসে তরুণ উদ্যোক্তাদের নিয়ে দাতব্য প্রতিষ্ঠান সামিট সিরিজ আয়োজিত এক অন-স্টেজ সাক্ষাৎকারে জেফ বেজসকে তাঁর সাফল্যের গোপন রহস্য নিয়ে প্রশ্ন করা হয়েছিল। বললেন, ‘আমার দর্শন হচ্ছে একসঙ্গে অনেক কাজ না করা। আমি যে কাজটি করি সেটি মনোযোগের সঙ্গেই করি, ওই সময় অন্য কোনো কাজ করি না। আমি যখন পরিবার ও বন্ধুদের সঙ্গে ডিনার করি, তখন ডিনার করতেই পছন্দ করি আর কিছু নয়। একসঙ্গে একাধিক কাজ করা আমি পছন্দ করি না। যখন আমি ই-মেইল চেক করি তখন ই-মেইলই চেক করি অন্য কিছু করি না।’
তিনি বলেন, ‘মাঝেমধ্যে মানুষ মনে করে যে জ্ঞানের বিশাল রাজ্যে তাঁকে বিশেষজ্ঞ হতে হবে সমস্যা সমাধানের জন্য; কিন্তু এ ক্ষেত্রে একটি বড় ঝুঁকি হচ্ছে আপনি যদি অনেক বিষয়ে বিশেষজ্ঞ হন তবে জ্ঞানের ফাঁদে পড়ে যেতে পারেন। আমার পরামর্শ হচ্ছে সমস্যা সমাধান করতে হবে শিশুসুলভ অনুসন্ধিত্সু নিয়ে।
বেজস বলেন, শৈশবের অভিজ্ঞতা থেকে আমি জীবনের অনেক শিক্ষা নিয়েছি। ৪ বছর থেকে ১৬ বছর বয়স পর্যন্ত গ্রীষ্মের সময় আমি বিচ্ছিন্ন একটি এলাকায় দাদার একটি ফার্মে কাটিয়েছি। সেখানে শিখেছি কিভাবে আত্মনির্ভরতা অর্জন করতে হয় এবং কঠিন সময়ে টিকে থাকতে হয়। সেখানে বুঝেছি ঝুঁকি নেওয়ার মূল্য এবং তার জন্য জীবনে কোনো দুঃখ করতে হয় না।
তিনি বলেন, ‘আমি উদ্যোক্তা হওয়ার জন্য অনেক বড় লাভজনক চাকরি ছেড়ে দিয়েছি। ওয়ালস্ট্রিটে একটি ফিন্যান্স সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের চাকরি ছেড়ে দিয়ে ইন্টারনেটভিত্তিক বইয়ের দোকান দিই। যেটি এখন অ্যামাজনে পরিণত হয়েছে। আমি জানতাম যখন আমার বয়স ৮০ হবে তখন আজকের কাজের জন্য আমাকে দুঃখ করতে হবে না।
আমি যখন ইন্টারনেটভিত্তিক কাজটি শুরু করি বুঝতে পেরেছি বড় একটি কাজ করতে যাচ্ছি, ফলে ব্যর্থ হলেও আমাকে এ নিয়ে দুঃখ করতে হবে না; কিন্তু কাজটি যদি আমি না করতাম তবে এ জন্যই আমাকে দুঃখ পেতে হতো। যে যন্ত্রণা আমার প্রতিটি মুহূর্তকে শেষ করে দিত। মেইল অনলাইন।
তথ্য সূত্র: কালের কণ্ঠ।