কিশোরগঞ্জের ভৈরবে মিনি আরএএস ( রি-সার্কুলেশন অ্যাকোয়াকালচার ) পদ্ধতিতে ঘরের ভিতরে ট্যাংকের মধ্যে চাষ হচ্ছে মাছ। উপজেরা শম্ভুপুর গ্রামের শাহজাহান মিয়ার ছেলে রায়হান মিয়া একটি টিনশেটের ঘরে ১হাজার লিটার পানি ধারণ ক্ষমতার চারটি ট্যাংকে প্রথম পর্যায়ে ৪ হাজার শিং মাছের পোনা ছাড়েন।
ওই ৪টি ট্যাংকে পানি ফিল্টারিংয়ের ৪টি ড্রাম সহ পানি উত্তোলনের জন্য একটি পাম্প ও একটি আইপিএস রয়েছে। মিনি আরএএস পদ্ধতিতে পাবদা, গুলশা ও শিং মাছ চাষ করা গেলেও সে শুধু ৪/৫ ইঞ্চি দৈর্ঘ্যরে শিং মাছের পোনা চাষ করছেন। মাছ বিক্রির উপযোগী হতে ৪ থেকে ৫ মাস সময় লাগবে। প্রতি এক মাস পরপর ট্যাংকের পানি পরিবর্তন করতে হয়। খাবার হিসেবে ভাসমান ফিড ৭-৮শ গ্রাম খাবার দিতে হয়েছে। মাছের আকার একটু বড় হলে ১২-১৩শ গ্রাম খাবারের প্রয়োজন হয়।
অন্যান্য এলাকায় সম্পূর্ণ বৈজ্ঞানিক উপায়ে মাছ চাষ করলেও ভৈরবে এই প্রথম ঘরের ভিতরে মাছ চাষ করা করা হচ্ছে বলে জানান তিনি। তবে মিনি রি-সার্কুলেশন অ্যাকোয়াকালচার পদ্ধতিটি অনেকটাই ব্যয়বহুল। তার সকল ব্যয় ও মাছের পোনা বাবদ ৯০ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। প্রথম পর্যায়ে প্রজেক্ট তৈরি করতে গিয়ে প্রচুর টাকা খরচ হলেও ৮ হাজার শিং মাছ চাষ করতে পরবর্তীতে শুধু পোনা, খাবার ও বিদ্যুৎ বিল মিলে ৬০ হাজার টাকার মত খরচ পড়বে। ৫মাস পর ওই ৮ হাজার মাছ বিক্রি আসবে অন্তত ১ লাখ ৬০ হাজার টাকা।
মাছ চাষী রায়হান মিয়া জানান, আমি আমার দুই বন্ধুকে নিয়ে এই আর এ এস পদ্ধতিতে মাছ চাষ প্রকল্প শুরু করেছি। এই চারটা টেংকে ৮ হাজার মাছ চাষের ব্যবস্থা থাকলেও আমরা ৪ হাজার মাছ চাষ করছি। এই প্রকল্প চালু করতে আমার সর্বমোট খরছ হয়েছে ৯০ হাজার টাকার মত। প্রকল্প চালু করেছি প্রায় ২০-২৫ দিন হয়েছে । এ পর্যন্ত কোন রকমের সমস্যা দেখা দেয়নি। এমনকি এ পর্যন্ত একটি মাছও মারা যায়নি। মাছের বৃদ্ধিও ঠিক আছে। স্বল্প পুঁজি নিয়ে শুরু করেছি । সরকারি সহায়তা পেলে প্রকল্পটি আরো বড় আকারে করা যেত। এ পদ্ধতিতে মাছ চাষ করতে পারলে ভালো মুনাফা অর্জন সম্ভব বলে জানান তিনি।
এলাকাবাসী জানান, ভৈরবে আর এ এস পদ্ধতিতে ঘরের ভিতরে মাছ চাষের খবর পেয়ে আমরা দেখতে এসেছি। এসে যা দেখলাম তাতে মনে হয় দেশের শিক্ষিত বেকার যুবকদের এই মাছ চাষে অনেক আগ্রহ বাড়বে। এই পদ্ধতিতে মাছ চাষে কোন লোকসানের সম্ভাবনা নইে। কিছু টাকা পুজি খাটাতে পারলে বেকারত্ত ঘুচবে।
উপজেলা সিনিয়র মৎস অফিসার রিপন কুমার পাল জানান, সম্ভূপুর এলাকায় আর এ এস ( রি-সার্কুলেশন অ্যাকোয়াকালচার ) পদ্ধতিতে যে মাছ চাষ শুরু হয়েছে তা একটি বিশেষ পদ্ধতিতে মাছ চাষ। ভৈরবে এই প্রথম এ পদ্ধতিতে মাছ চাষশুরু হয়েছে। আমাদের বাংলাদেশের বিভিন্ন জেলায় বিশেষ ধরণের মাছ চাষ যেমন খাচায় মাছ চাষ, প্লাবণ ভ’মিতে মাছ চাষ, পেনি মাছ চাষ, সমনীতে মাছ চাষ। আর এ এস পদ্ধতিতে মাছ চাষ একটা নতুন পদ্ধতির নব দিগন্ত উন্মোচজন হল ভৈরবে। যেহেতু প্রাকৃতিক জলাশয়ে সময় মতো বৃষ্টি হয়না বন্যা, খরা, পরিবেশ দূষন, এই সমস্থ ক্ষেত্রে আামদের গৃহাঙ্গনে যে মাছের চাষ শুরু হয়েছে । শিক্ষিত বেকার যুবকরা আসতেছে মাছ চাষে এটা মৎস্য চাষের জন্য একটা ভাল দিক । যেহেতু বাংলাদেশ মৎস্য চাষে চতুর্থ স্থানে রয়েছে। আর এ এস পদ্ধতিতে আমরা টেংরা, পাবদা, গুলশা ও শিং মাছ চাষ করতে পারব। যে সমস্থ জিউল মাছ আমরা যদি জীবিত আকারে বাজারে পাঠাতে পারি , আমাদের উৎপাদন যেমন বাড়বে বাজার মূল্যটাও বেশি পাওয়া যাবে। এই আর এ এস পদ্ধতিতে মাছ চাষ করতে গিয়ে প্রথমে খরছটা একটু বেশি পড়লেও দিনে দিনে খরছটা কমে আসবে আর তখন লভ্যাংশ বেড়ে যাবে। এখানে যদি নিরবিচ্ছিন্ন বিদ্যূৎ ও স্বাস্থ্য সম্মত পানির সাপ্লাইটা যদি ধরে রাখা যায় তাহলে আর এ এস পদ্ধতিটা খুবই উপকার হবে বলে আমি মনে করি।
তথ্য সূত্র: সময়ের সংবাদ।